খালে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার, নামছে না বন্যার পানি
লক্ষ্মীপুরে মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বানভাসিদের। উজানের পানি ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। প্লাবিত হয়েছে জেলার ৫টি উপজেলার সাড়ে ৮ লাখ মানুষ। বন্যা এসব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ধীরগতিতে নামছে পানি। তার কারণ হিসেবে দেখা গেছে খালের ওপর বাঁধ তৈরি করে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে পানি চলাচলের পথ। ফলে বেশিভাগ খালে বাঁধ থাকায় পানি নামছে ধীরগতিতে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত পানি না নামলে জলাবদ্ধতায় এই অঞ্চলের মানুষকে ভুগতে হবে। দ্রুত এসব অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে পানি চলাচল স্বাভাবিক রাখার দাবি তাদের।
এদিকে, বন্যার পানিতে এখনো তলিয়ে রয়েছে জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার বেশিভাগ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা ডাকাতি ও রহমতখালী খালসহ বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় প্রায় ১১০টি খাল রয়েছে। এসব খালে প্রায় আড়াই হাজার বাঁধ রয়েছে। বেশিভাগ বাঁধ অবৈধভাবে দিয়ে মাছ চাষ করেছেন এক প্রভাবশালী। ফলে বন্যা বা জলাবদ্ধতার পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ডাকাতিয়া ও ভূলুয়া নদী, রহমতখালী এবং বিরোন্দ্রখাল পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ। প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী বা খাল মিশেছে মেঘনা নদীতে। এই চারটি খালের আশপাশের পানি কমছে দুই থেকে আড়াই ফুট। এ ছাড়া এখনো তলিয়ে আছে বেশিভাগ রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে খালের ওপর নির্মিত বাঁধের কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ বাঁধ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এরইমধ্যে দুই শতাধিক স্থানে খালের ওপর বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদ-উজ-জামান বলেন, ১১০টি ছোট-বড় খাল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া কয়েক হাজার অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন রয়েছে। অবৈধভাবে দখল করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। দ্রুত পানি নেমে গেলে বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।