ঢলতার ফাঁদ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন কৃষকেরা
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ধান বাজারে বিক্রি করতে ‘ঢলতা’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেন কৃষকেরা। এতে প্রতি দুই মণে চার কেজি ধান বেশি দিতে হতো। কৃষক ও সাধারণ ছাত্রদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত মতবিনিময় সভার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। পরে সভায় ৪০ কেজিতে ধানের মণ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে ঢলতার ফাঁদ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন কৃষকেরা।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কৃষক, ধান ব্যবসায়ী, সেনাবাহিনী,পুলিশ ও ছাত্রদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভা হয়।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমেই কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে গেলে স্থানীয় আড়তদারেরা ৮০ কেজিতে (প্রতি দুই মণে) ঢলতা হিসেবে আরো ৪ কেজি ধান বেশি নিতেন। কৃষকেরাও নিরুপায় হয়ে মেনে নিতেন। পরে এই অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে সাধারণ কৃষকেরা মিলে গড়ে তোলেন ‘নালিতাবাড়ী কৃষক উন্নয়ন ফোরাম’। পরে গত বছর ঢলতার প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা। প্রায় দেড় হাজার কৃষক এতে স্বাক্ষর করেন। পরে মানববন্ধন ও কৃষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪১ কেজিতে মণ হিসাবে ধান কেনাবেচার সিদ্ধান্ত দেয় প্রশাসন।
সেসময় সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও চলতি মৌসুমে আবারো আগের মতোই ঢলতার নামে প্রতি দুই মণে চার কেজি ধান বেশি দিতে বাধ্য হচ্ছিলো কৃষকেরা৷ পরে এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন নালিতাবাড়ী কৃষক উন্নয়ন ফোরাম ও ঐক্যবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবী-ছাত্র সংসদের নেতারা। পরে ৪০ কেজিতে মণ নির্ধারণ এবং ওজনে অতিরিক্ত ধান নিলে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শাস্তির ঘোষণা করে মাইকিং করা হয়। এ কারণে ধান কেনা বন্ধ রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পরে বিষয়টি সমাধানে কৃষক,ধান ব্যবসায়ী, ছাত্র, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা। এ সময় কৃষক, ধান ব্যবসায়ীদের কথা শুনে ৪০ কেজিতে ধান কেনাবেচার সিদ্ধান্ত দেয় প্রশাসন।
কৃষক উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মাহমদুল আহসান লিটন বলেন, উপজেলার কৃষকদের দাবি পূরণ হয়েছে। আশা করছেন এখন থেকে অতিরিক্ত ধান দিয়ে কৃষকদের আর ঠকতে হবে না। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক বাজার পরিদর্শনে একটি কমিটি গঠনের দাবী জানান তিনি ।
আড়তদার মফিজুল ইসলাম বলেন, ধানের কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হবে। আর ধান রাখার বস্তার ওজন ছাড়া ৪০ কেজিতে এক মণ হিসাবে কেজি দরে ধান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, কৃষকেরা কেজি হিসেবে ধান বিক্রি করবেন। শুধু বস্তার ওজন বাদ দেওয়া হবে। অতিরিক্ত ধান হিসেবে আর ‘ঢলতা’নেয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ এই অন্যায় কাজ করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।