• ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২১ আশ্বিন ১৪৩১

Shongbad Protikshon || সংবাদ প্রতিক্ষণ

কাউকে নিয়ে গিবত, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার পরিণতি

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কাউকে নিয়ে গিবত, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার পরিণতি

কাউকে নিয়ে গিবত, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার পরিণতি

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। এবং সৃষ্টিজগতের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি, তাদের জন্য জলে-স্থলে যানবাহনের ব্যবস্থা করেছি, তাদের পবিত্র রিজিক দিয়েছি আর আমি তাদের আমার বেশির ভাগ সৃষ্টির ওপর মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’। (সূরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭০)
কাজেই কারো সম্মানহানি হয়, এমন কাজ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এই সূত্র ধরে ইসলামে গিবত, কুধারণা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ এবং কারো দোষ অন্বেষণে লেগে থাকা নিষিদ্ধ। কাউকে নিয়ে অকারণে ট্রল করা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কোনো সুশিক্ষিত ও ভদ্র মানুষের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনেই এ ধরনের কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভি জবাই করবে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ? সে বলল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই’। (সূরা: বাকারাহ, আয়াত: ৬৭)

কারো নাম নিয়ে প্রায়ই ট্রল করতে দেখা যায়, বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বন্ধুমহলে একে অন্যকে নাম বিকৃত করে ডাকতে দেখা যায়। নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করার এই প্রবণতা দিন দিন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

শরিয়ত এভাবে মানুষের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে মারাত্মক গুনাহ ও গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না তারাই তো জালিম’। (সূরা: হুজুরাত, আয়াত: ১১)

ইসলামে কারো ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে হাসি-তামাশা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

কটূক্তি বা সম্মানহানিকর কোনো কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাদের আরাধনা করে, তোমরা তাদের মন্দ বোলো না। তাহলে তারা ধৃষ্টতা দেখাতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালমন্দ করবে। এভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের পালনকর্তার কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন, যা কিছু তারা করত’। (সূরা: আনআম, আয়াত: ১০৮)

ঠাট্টা-বিদ্রুপ এত নিকৃষ্ট কাজ যে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কাজকে ‘দূষণ সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো একসময় মহানবী (সা.)-কে আমি একজন ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)

কাউকে নিয়ে ট্রল করলে সেই ট্রলের শিকার দুনিয়ায় আপনিও হতে পারেন। কারো বিপদ দেখে মশকরা করলে আপনিও সেই বিপদে পড়তে পারেন। ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার কোনো ভাইয়ের বিপদে তুমি আনন্দ প্রকাশ করো না, অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তাকে দয়া করবেন এবং তোমাকে সেই বিপদে নিক্ষিপ্ত করবেন’। (তিরমিজি, হাদিস: ২৫০৬)