রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পারিবারিক জীবনযাপন কেমন ছিল?
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করনে, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে’। (সূরা: আহজাব, আয়াত: ২১)
মানবতার মুক্তির দূত সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয়, অনুসরনীয় আদর্শ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী-জীবন, তার দাওয়াতি জীবন, শিক্ষক জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন যেমন আমাদের জন্য আদর্শ, তার পারিবারিক ও সাংসারিক জীবনও আমাদের জন্য আদর্শ। পারিবারিক জীবনে নবীজি (সা.)-কে অনুসরণ করলে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের পারিবারিক জীবন সুন্দর ও সুখের হতে পারে। নবীজি (সা.) এর পারিবারিক জীবনযাপন কেমন ছিল তা কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি এখানে।
স্ত্রীদের নবীজি (সা.) সম্মান করতেন ও গুরুত্ব দিতেন। তাদের সঙ্গে তার হৃদ্যতা ও সহানুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। নিজের ভাবনা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তাদের কাছে তুলে ধরতেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শও করতেন। তার ওপর প্রথম ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি যখন ভয় পেয়ে যান, তখন তিনি ছুটে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) এর কাছে। তাকে তিনি খুলে বলেছিলেন, সেই আশ্চর্য ঘটনা, নিজের ভয় ও আশংকার কথা। তখন হজরত খাদিজা তাকে সান্ত্বনা দেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর নবীজি (সা.) খাদিজার (রা.) কাছে কম্পিত হৃদয়ে ফিরে এলেন এবং বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলে তার ভয় কিছুটা কাটলো। তিনি খাদিজার (রা.) কাছে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি আমার জীবন সম্পর্কে শঙ্কাবোধ করছি।
খাদিজা (রা.) তাকে বললেন, কখনো না, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্য কথা বলেন, অনাথ অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদারি করেন, বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। (সহিহ বুখারি)
হোদায়বিয়ার সন্ধীর ঘটনায় নবীজি (সা.) স্ত্রী উম্মে সালামার (রা.) পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন ঐ ঘটনাটিও প্রসিদ্ধ। মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত হোদায়বিয়ার সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বললেন, আপনারা কোরবানি করুন এবং মাথা কামিয়ে ফেলুন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা.) ৩ বার তা বলার পরও কেউ উঠলেন না। (কারণ মক্কার কাছে এসেও ওমরাহ না করে ফিরে যেতে হবে এটা অনেক সাহাবি মেনে নিতে পারছিলেন না)
রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মে সালামা (রা.) এর কাছে গিয়ে এই অবস্থার কথা বললেন। উম্মে সালামা (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি যদি তাই চান (এখানেই সবাই কোরবানি করে মাথা কামিয়ে ফেলুক) তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে আপনার উট আপনি কোরবানি করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা কামিয়ে নিন।
তার পরামর্শ অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা.) বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে নিজের পশু কোরবানি করলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা কামালেন। তার দেখাদেখি সাহাবিরাও তাদের পশু কোরবানি এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দেওয়া শুরু করলেন। (সহিহ বুখারি)
নবীজি (সা.) স্ত্রীদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। বিভিন্ন আচরণে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করার চেষ্টাও করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি পানির পাত্রের যেখানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতাম আমার পর নবীজি (সা.)-ও ঐ জায়গায় মুখ লাগিয়ে পান করতেন। (সহিহ মুসলিম)
নবীজি (সা.) স্ত্রীদের আবেগ-অনুভূতির প্রতিও লক্ষ্য রাখতেন। তাদের মন বোঝার চেষ্টা করতেন। একবার নবীজি (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেন, আয়েশা, আমি বুঝতে পারি, তুমি কখন আমার ওপর খুশি থাকো আর কখন আমার ওপর রেগে থাকো’! আয়েশা বললেন, ‘কীভাবে বোঝেন?
নবীজি (সা.) বললেন, তুমি আমার ওপর খুশি থাকলে বলো, ‘মুহাম্মাদের রবের কসম’ আর আমার ওপর নারাজ থাকলে বলো ‘ইব্রাহিমের রবের কসম’! আয়েশা বললেন, ঠিক বলেছেন, কিন্তু আল্লাহর শপথ আমি শুধু মুখেই আপনার নাম ত্যাগ করি। অন্তরে সবসময় আপনি থাকেন। (সহিহ বুখারি)
নবীজি (সা.)-কে অনুসরণ করে আমরাও যদি জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ভালোবাসা ও সম্মানের সম্পর্ক রাখি, জীবনসঙ্গীকে বুঝতে চেষ্টা করি ও গুরুত্ব দেই, তাহলে আমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর সুখের হতে পারে, আল্লাহ আমাদের সুখী পারিবারিক জীবন দান করতে পারেন।
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকেও বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতোন পারিবারিক জীবনযাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।