আন্দোলন-বন্যার পর জয়টা আনন্দ বয়ে আনবে
দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেয়ার মতো ঘটনার পর সিরিজ খেলতে দেশ ছাড়ে টাইগাররা। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই ১৩ জেলা ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়। তাতে মানুষের জীবন দুর্বিষহ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
সংকটকালে ক্রিকেটপাগল জাতিকে সাফল্য এনে দেওয়ায় খানিক স্বস্তি পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমন অর্জন কষ্টে থাকা মানুষের মনে আনন্দ বয়ে আনবে বলেই তার বিশ্বাস।
শান্ত বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই জয়টা দেশের মানুষের জন্য অনেক আনন্দ বয়ে আনবে। কারণ যেভাবে গত কিছু দিন ধরে বন্যা বলেন, আন্দোলনটা বলেন... অনেক মানুষের অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা যেভাবে ম্যাচটা খেললাম, আমার মনে হয় যে, একটু হলেও তাদের মুখে হাসি ফুটবে। আমরা সবাই জানি, আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেটের জন্য কতটা পাগল। আমরা ম্যাচ হারলেও সবাই যেভাবে আমাদের সমর্থন করে। তাই আমাদের ওটাই চেষ্টা ছিল, কীভাবে দেশের মানুষকে আমরা কিছু দিতে পারি। আমার মনে হয়, আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে ২১৮ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখনো স্বাগতিকদের চেয়ে ২৩০ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে ১১৭ রানের লিড পায় টাইগাররা।
দ্বিতীয় টেস্টেও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের গল্পই লিখেছে টাইগাররা। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লিটনের সেঞ্চুরি ও মিরাজের হাফ সেঞ্চুরিতে জমে ওঠে লড়াই। পরে পেসারদের কল্যাণে পাকিস্তানকে অল্পতেই আটকে দেয় বাংলাদেশ। এমন অভাবনীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়েও কথা বলেন শান্ত।
‘আমি মনে করি, বিশ্বাসটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যেকটা ক্রিকেটার বিশ্বাস করে আমরা যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারি। আপনারা জানেন, মিরাজ ৮ নম্বরে ব্যাটিং করে। আমাদের যে ব্যাটিং গভীরতাটা আছে, আমরা বিশ্বাস করি যে, কেউ যদি থিতু হতে পারে, বড় স্কোর করবে। তো প্রত্যেকের মধ্যে যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়ানোর এই বিশ্বাস থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
সিরিজের আগে পরিসংখ্যান একেবারেই পক্ষে কথা বলছিল না। মুখোমুখি লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্টের ১২টিতে চিল হার, এক ম্যাচ হয়েছিল ড্র। ঘরের মাঠেই দলটির বিপক্ষে যেখানে জয় নেই, তাই অ্যাওয়ে সিরিজে প্রত্যাশার পারদটা মোটেও উঁচুতে ছিল না। সিরিজ শুরুর আগে অবশ্য নাজমুল হোসেন শান্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে অতীতের আগেকার ব্যর্থতার রেকর্ড ভাঙার কথা বলেছিলেন। তার দল মাঠেই দিয়েছে সেই প্রমাণ। প্রথম টেস্ট ১০ উইকেটের পর দ্বিতীয়টিতে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জিতে গড়েছে ইতিহাস। পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে করেছে হোয়াইটওয়াশ।