চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশের সোনার বাজারে চলছে উত্থান-পতন। ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ৩২ বার সোনার দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এর মধ্যে ১৭ বারই বাড়ানো হয়েছে দাম, কমানো হয়েছে ১৫ বার।
সবশেষ দাম সমন্বয়েও সোনার দাম বাড়িয়ে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলে সামনে দেশের বাজারে আরো বাড়বে দাম।
প্রাচীন কাল থেকেই সোনাকে বলা হয়, অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়ত সে কারণেই এর মূল্য কখনো শূন্যে নামেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে এর মূল্য।
চলতি বছরের শুরু থেকে১৫ জুলাই পর্যন্ত ৩২ বার সোনার দাম সমন্বয় করেছে (বাজুস)। এর মধ্যে ১৭ বারই বাড়ানো হয়েছে দাম, কমানো হয়েছে ১৫ বার।
বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালজুড়ে মোট ২৯ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। এ বছর এরই মধ্যে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৩২ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ১৭ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ১৫ বার।
দেশের বাজারে সোনার দামের এমন ঘন ঘন পরিবর্তন মূলত বিশ্ববাজারের দামের কারণেই ঘটছে। রোববার স্পট মার্কেটে সোনার দাম অবস্থান করছিল ২ হাজার ৪১১ দশমিক ৪৪ ডলারে। আর গত এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে রেকর্ড ছুঁয়েছিল সোনার দাম। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় গত ১২ এপ্রিল লেনদেনের এক পর্যায়ে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম উঠে যায় ২৪৩১ দশমিক ৫১ ডলারে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ওঠা-নামা এবং স্থানীয় বাজারে তার প্রতিফলন-এটিই সোনার দামের এমন উত্থান-পতনের মূল কারণ। সামনে বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়বে। আর কমলে দেশের বাজারেও কমবে।
২০২৩ সালজুড়ে মোট ২৯ বার সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অস্থিতিশীল বিশ্ববাজারের জন্যই দেশের বাজারে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, দেশে সোনার দামের ঘন ঘন পরিবর্তনের মূল কারণ বিশ্ববাজারে দামের অস্থিতিশীল অবস্থা। বিশ্ববাজারে সোনার দাম অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়। তা না হলে, সোনা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু ঘন ঘন সোনার দাম ওঠা-নামা করাও আশঙ্কার বিষয়। এতে এ বাজারে বিনিয়োগকারী কমবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছর সোনার বাজার ঊর্ধ্বমুখীই বেশি। আস্তে আস্তে এ বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এইটা খুব চিন্তার বিষয় এ খাতের ভবিষ্যতের জন্য। পাশাপাশি দেশের স্বর্ণ খাত আস্তে আস্তে যখন আলো দেখতে পাচ্ছিল এবং বিশ্ববাজারে দেশের সোনার গহনার রফতানি শুরু হয়, তখন বিশ্ববাজারের এই পরিস্থিতির জন্য দেশের এ খাত হুমকির মুখে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ওঠা-নামা এবং স্থানীয় বাজারে তার প্রতিফলন-এটিই সোনার দামের এমন উত্থান-পতনের মূল কারণ।
এদিকে, ঘন ঘন সোনার দাম সমন্বয়ের কারণে অস্বস্তিতেও রয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। সোনার দামের এই ঘন ঘন পরিবর্তনে বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে তাদের।
রাজধানীর তাঁতিবাজারে সোনা ব্যবসায়ী বিপ্লব জানান, ঘন ঘন দাম পরিবর্তন আর রেকর্ড দামে কমে গেছে বেচাবিক্রি। কারণ শুধু সোনা কিনলেই হয় না। গহনা গড়তে মজুরি রয়েছে। এখানে বেড়ে যায় দাম। ফলে পরিমাণে কম কিনছে মানুষ।
এমন পরিস্থিতি এড়াতে মাসভিত্তিক সোনার দাম নির্ধারণ করার বিষয়ে বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান জানিয়েছিলেন, বিশ্ববাজারে দাম স্থিতিশীল না হলে কখনোই দেশের বাজারে সোনার দাম মাসব্যাপী এক রাখা সম্ভব না। আর বিশ্ববাজারে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওঠানামা করে সোনার দাম। এ কারণে দেশের বাজারে কখনোই সোনার দাম মাসব্যাপী এক রাখা সম্ভব না।
ঘন ঘন সোনার দাম সমন্বয়ের কারণে বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে ব্যবসায়ীদের।
সবশেষ ১৫ জুলাই সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৯০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকায়। যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৮ হাজার ২৪৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হচ্ছে ৮১ হাজার ২২৯ টাকায়। সোনার বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিক সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত হচ্ছে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।