আমার সবচেয়ে বড় মিশন বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং: আসিফ রহমান
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বেসিস। যা জাতীয়ভাবে সফটওয়্যার এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন ৮ মে। এরই মধ্যে তিনটি প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। বেসিস নির্বাচনে টিম ওয়ান প্যানেল থেকে পরিচালক পদে প্রার্থী এআর কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আসিফ রহমান।
বেসিস নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণ জানিয়ে আসিফ রহমান বলেন, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসার প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশীয় সফওয়্যার ব্যবহারে প্রাধান্য দেওয়া, রফতানি আয় বাড়ানো, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বেসিসকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। আমাদের কয়েকটি মূল সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধান না করলে সংগঠনটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যপথে এগিয়ে যেতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, আমার কোম্পানি লোকাল মার্কেটে কাজ করে না, সেটার কারণ ব্যবসায়িক। বেসিসে নির্বাচন করার আমার ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নেই এবং সেটি সম্ভবও নয়। এই দেশের আইটি কমিউনিটির প্রতি আমার ভালোবাসা এবং সবার কাছ থেকে শেখার তুমুল আগ্রহ রয়েছে। আমি মনে করি, নলেজ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে সবাই একসঙ্গে দেশের আইসিটি ব্যবসাকে খুব সহজেই পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া যায়।
আসিফ রহমান বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের একাধিক কোম্পানিকে বিশ্বদরবারে সম্মানের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি সবার দোয়া আর ভালোবাসায়। আমি কাজ করেছি দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে এবং তরুণ আইসিটি উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করেছি সেই প্রথমদিন থেকেই। আমার এই কাজের পরিধিকে আরো বৃহত্তর ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষেই এবার আমার বেসিস নির্বাচনে অংশগ্রহণ।
বিদেশে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে কী ধরনের কাজ করবেন তাও জানান এ আইটি উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, কান্ট্রি ব্রান্ডিং হবে এবার আমার সবচেয়ে বড় মিশনগুলোর একটি। নিজের ব্যবসায়ের কাজে গেল ২০ বছরে প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়েছে, অর্গানাইজ করতে হয়েছে প্রচুর ইভেন্ট, এক্টিভেশন। মন খারাপ লাগতো এটা দেখে যে, যেখানে প্রতিবেশি দেশগুলোর অনেক কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছ সেখানে বাংলাদেশি কোম্পানি একদমই হাতেগোনা। আমি সবাইকে নিয়ে একবারে দেশের ঝান্ডা, বেসিসের পতাকা পুরো বিশ্বে বয়ে বেড়াতে চাই। বাংলাদেশকে একটি ‘আইটি হাব’ হিসেবে পরিচিতি করতে চাই। বেসিসে এক্সপোর্ট রিলেটেড হেল্প ডেস্ক বসাতে চাই। আমি কোলাবোরেটিভ গ্রোথে বিশ্বাসী। আমি সবাইকে নিয়ে এক জোটে গ্লোবাল মার্কেটে কাজ করতে চাই।
নতুন বোর্ডের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী হবে জানিয়ে এম আসিফ রহমান বলেন, সরকার ব্যাপকভাবে ডিজিটালাইজেশনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমাদের প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগের ফলাফল গুটিকয়েক সদস্যের পরিবর্তে পুরো ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে নিতে পারে তার পরিবেশ নিশ্চিত করাও আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ। সামনে আমাদের নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করা, ট্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে সদস্যবান্ধব করা, স্কিলড রিসোর্সের অভাব দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, সদস্যদের অ্যাক্সেস টু ফান্ডের সুবিধা বাড়ানো ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। গ্লোবাল মার্কেটে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি মেম্বারদের গ্রোথে সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচনে জয়ী হলে বেসিসের নানা জায়গায় পরিবর্তনের কথাও বলেন তিনি। এআর কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমার প্রথম ইচ্ছা বেসিস সদস্যদের গ্লোবাল মার্কেটের জন্য প্রস্তুত করতে বেসিসে এক্সপোর্ট বিষয়ক হেল্প ডেক্স করা। বৈদেশিক বাজারে দেশের কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং নিয়েও কাজ করতে চাই। দ্বিতীয়ত: বেসিস সদস্য, প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডারদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিনিয়র বেসিস সদস্যদের সহযোগিতায় মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করতে চাই। তৃতীয়ত: দেশব্যাপী বেসিসের একাধিক কো ওয়ার্কিং স্পেস তৈরি করতে চাই এবং মেম্বার ওয়েলফেয়ারে আরো ফোকাস হয়ে সদস্যদের উন্নয়নে সরাসরি কাজ করতে চাই। চতুর্থত: বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্যাক্স, ভ্যাট সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য এনবিআর এবং বেসিসে আলাদা হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা করা নিয়ে কাজ করবো। অন্তত ২০৩০ পর্যন্ত যেন সফটওয়্যার এবং আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্পোরেট ট্যাক্স যেন শূন্য শতাংশে রাখা হয় তা নিয়ে পলিসি লেভেলে কাজ করতে চাই।
এম আসিফ রহমান বলেন, আমি মনে করি বেসিসের সম্মানিত সদস্যরা অত্যন্ত বিচক্ষণ। আমি নিশ্চিত তারা প্রার্থীদের সক্ষমতা, দক্ষতা, যোগ্যতা দেখেই তাদের মূল্যবান ভোট দেবেন।